অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদায়ী নারীদের জন্য কোভিড টিকার ঝুঁকি কতটুকু?

অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদায়ী নারীদের টিকা দেওয়ার দাবি আসছে বেশ কিছুদিন ধরেই। দেশে গত ফেব্রুয়ারি মাসে গণ টিকাদান শুরু হলেও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের উপর এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ না হওয়ায় তাদের টিকার বাইরে রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কোভিড টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকার কারণে তাদের বাড়তি কোনো সমস্যা হওয়ার তথ্য এখন পর্যন্ত মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন, যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন এবং অস্ট্রেলিয়ার টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অন ইমিউনাইজেশন অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও কোভিড টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।

আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, যেখানে টিকা নিলে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কার চেয়ে উপকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেখানে অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও কোভিড টিকা নেওয়া উচিত। এর মধ্যে হাই কোর্টে রিট আবেদন হলে সোমবার আদালত অন্তঃসত্ত্বা নারীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে বলেছে। এদিকে গত ৩১ জুলাই অন্তঃসত্ত্বা এবং স্তন্যদায়ী নারীদের করোনাভাইরাসের টিকা দিতে সুপারিশ করেছে জাতীয় টিকা পরামর্শক কমিটি (ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ- নাইট্যাগ)। “অবস্ট্রাক্টিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম জানিয়েছেন, গত ২৪ জুলাই সরকারের কাছে এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তারা।“আমাদের অনুরোধ থেকেই বিষয়টি জাতীয় টিকা পরামর্শক কমিটির কাছে গেছে। নাইট্যাগে গিয়ে আমি বিষয়টা বিষদভাবে তুলে ধরেছি।”

ঝুঁকিতে মা ও সন্তান

চিকিৎসকদের ভাষ্য, টিকার আওতায় না আসায় অনেক স্তন্যদায়ী ও অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং সন্তান ঝুঁকির মুখে পড়ছেন।স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম বলেন, “যেসব গর্ভবতী নারীর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে, তা মারাত্মকভাবে হচ্ছে এবং তারা মারা যাচ্ছে। “গর্ভবতীদের জন্য টিকা যতটুকু কার্যকর, যারা গর্ভবতী নয় তাদের জন্যও ততটাই। অন্যান্য দেশেও গর্ভবতীদের টিকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাদের বাচ্চার কোনো সমস্যা বা বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়নি। ”এই চিকিৎসক বলেন, “এখন যেহেতু গর্ভবতী মায়েরা অনেক ঝুঁকিতে রয়েছে, তাই তাদের টিকা দেওয়া উচিত।”মায়েদের সুরক্ষা দিতে না পারায় শিশুরাও সংক্রমিত হচ্ছে বলে জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিওনেটোলজি বিভাগের অধ্যাপক মনিষা ব্যানার্জী। “আমাদের এখানে নবজাতক থাকে সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০ জন। আমরা যদি সাসপেক্টেড কেইস হিসেবে নবজাতকদের নমুনা পাঠাই, তাদেরও করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। কারণ হচ্ছে, বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থাতেই মা হয়ত করোনা পজিটিভ ছিলেন। মানুষ এখন এত বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, কেউই বাদ যাচ্ছে না। এবারের ঢেউয়ে দেখা যাচ্ছে, শিশুরা অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।”ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের স্ত্রী ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সারিয়া তাসনিম জানান, যারা গর্ভবতী ও বুকের ‍দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদের টিকা দিতে দ্বিধার কিছু নেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *