আমার মা কে দেওয়া প্রতিশ্রুতির নিশ্চয়তা কে দেবে ?

আমার মা কে দেওয়া প্রতিশ্রুতির নিশ্চয়তা কে দেবে ?

দেওয়ান মশিউর রেজা চৌধুরী রিপন : এই তো ৯৫-৯৬ সালের কথা, যেখানেই যেথাম আমার মা কে বলে যেথাম ”আম্মা আমি আসি” আমার মা উত্তরে বলতেন ”ঠিক আছে আসো” এই কয়েক বছরের ব্যবধানে আমার প্রিয় বাংলাদেশে সেই কথা আমি আর আজ বলতে পারিনা ! আমার দেশ প্রিয় বাংলাদেশ, দেশের সীমানা ঠিকই আছে বরঞ্চ একটু হলেও বেড়েছে, সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কয়েক গুন জনবল । তাই বলে কি মাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখার নিশ্চয়তা নেই ? তাই আজ প্রশ্ন জাগে নিজের মনে, আমরা কি দুর্বল জাতী ? আমরা কি ব্যর্থ জাতী ? আমরা কি বিবেক হীন জাতী ? আমরা কি নির্বোধ জাতী ? আমরা কি লোভী জাতী ? নাকি আমরা হিংসুটে জাতী ? সময় আর প্রয়োজনে মানুষ বদলীতে পারে না ! আমার সামনে অনেকেই বলেন ঐ মানুষটা বদলে গেছে ! ঠিক তখনি আমার মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে সে কি হয়েছে ! পশু ? কিন্তু কই আমি তো তার মাঝে বদলে যাওয়া কিছুই দেখি না ! কাপড় পরলেই কি মানুষ বদলে যায় ? দামী গয়না, দামী গাড়ি চড়ে বসলেই কি মানুষ বদলে যায় ? উচ্চ আসনে বসলেই কি মানুষ বদলে যায় ? না মানুষ বদলায় না ! কিছু কিছু মানুষ লোভে স্বভাব বদলায়, নৈতিকতা, মনুষ্যত্ব ও বিবেকের পচন ধরায় আর কিছু কিছু মানুষ নিজের অবস্থান পেয়ে নৈতিকতা, মনুষ্যত্ব ও বিবেক কে জাগ্রত করে । তবে এটা সত্য আমাদের সমাজ ব্যবস্থা বদলে গেছে । নৈতিকতা, বিবেক আর মনুষ্যত্বে পছন ধরেছে ! বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিতে আজ চলেনা আমার সোনার বাংলাদেশ ! রাজনীতি কে যারা আজ অপরাজনীতি, নুংরা রাজনীতি বলেন আমি তাদের কাছে জানতে চাই, এই সব রাজনীতির কোন পৃষ্ঠায় আপনার পেয়েছেন ? আজকাল আমার মনে হয় অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তি নিজেই জানে না রাজনীতি শব্দের অর্থ কি ? রাজনীতি কাদের জন্য ? আজকাল আমরা দেখি কর্মী থেকে নেতা হওয়ার প্রয়োজন হয় না ! কারন ”টাকার নাম জয়রাম টাকা হলেই হয় সব কাম” আজকালের রাজনৈতিক নেতারাও জানেন রাজনীতি করতে হলে কোন ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন হয় না, হয় না কোন শিক্ষার প্রয়োজন ! ভোট বাক্স বড়তে হলে টাকার বাক্স বিলাতে হবে, টাকা মানেই ভোট আর ভোট মানেই টাকা ! এবার বলেন নুংরা শব্দটা কোথায় বেশী মানায়, রাজনীতির পাশে না কি আমাদের বিবেকের পাশে ? তবে এটাও চরম সত্য ইদানিং রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি মানুষের এক ধরনের বিরক্তি কিংবা ঘৃণার মনোভাব দেখা যাচ্ছে । তারপরেও এ কথা মানতে হবে তারাই দেশ ও জাতীর অভিভাবক । কারণ যেকোনো জাতীয়, আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপ তারাই নেন। দেশ ও জাতীর অভিভাবকরা যখন স্বার্থপরের মত আচরণ করেন, তার প্রভাব তো এই জাতীর জীবনে কিছু না কিছু পড়বেই । দিনের পর দিন নেতাই বলুন, নীতিনির্ধারকই বলুন, তাদের আচরণের প্রভাবেই এই জাতী স্বার্থপরতার পথ বেছে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে । তবে এটা ঠিক, সময় আর প্রয়োজন মানুষকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে । তাই প্রতিনিয়ত মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে । সব সময় অস্থিরতা কাজ করে মানুষের মাঝে । মানুষের চিন্তা চেতনা এখন আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না । রাস্তাঘাটে এখন মানুষ প্রতিনিয়তই কোন না কোন বিপদের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় থাকে ! এমন কি ঘরের বাইরে বের হয়ে একজন মানুষ যে নিরাপদে সে তার ঘরে ফিরে আসবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই । চারপাশে পশুত্বের ছড়াছড়ি। অদৃশ্য দুর্ঘটনার হাতছানি প্রতিনিয়ত । তাই মানুষজন আজকাল আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে বহুলাংশে । আত্মার আত্মীয় তৈরীতে মানুষ আজ বিমুখ হয়ে পড়ছে । নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে, নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকছে সব সময় । অনেকটা ‘’নিজে বাঁচলে বাপের নাম’’ টাইপের । যার ফলে এখন আর একজনের বিপদে অন্য আরেকজন এগিয়ে আসছে না । কিংবা সম্মিলিতভাবে মানুষ এখন আর আনন্দে উৎসবে  মেতে উঠছে না । নিজের উচ্ছ্বাস, উল্লাস আর নিজের মতো করে ব্যাপকভাবে প্রকাশ করতে পারে না । এই আত্মকেন্দ্রিকতা, এই অসামাজিকতা আমাদের বিপজ্জনক এক ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি । মানুষ সামাজিক ও সংঘবদ্ধ জীব । মানুষের এই মৌলিক সংজ্ঞাটি বিবর্তিত হয়ে গেলে মানুষ কি আর মানুষ থাকবে ? জাতি এখন সর্বগ্রাসী ক্ষুধায় আক্রান্ত, স্বল্পতে তুষ্ট জাতির প্রাচীন ঐতিহ্য, এখন অন্য ভুবনে স্থানান্তরিত হয়েছে । সব কিছুতেই ব্যক্তি তার আপন ভুবনে নিজেকে দেখতে চেয়েছে । সমাজ সংস্কৃতিতে এসেছে পরিবর্তনের ঢেউ । সর্বত্রই সুবিচার, সাম্যের নীতিতে দুর্ভিক্ষ ভর করেছে । মিথ্যা, জুলুম ও নির্বিবেক প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক ছলনা, সমাজ ব্যবস্থা থেকে নিয়মনীতি আদর্শকে বিদায় করেছে । তাই আমরা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত । শত ব্যস্ততার মাঝে ও শিক্ষক ক্লাস ত্যাগ করার আগে, ছাত্র কে ইঙ্গিত দিচ্ছেন ‘প্রাইভেট’ পড়লে সমস্যার সব সমাধান হয়ে যাবে !’ কোন সমাজ বা রাষ্ট্রের মানুষগুলো যখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, অন্যের সুখ সুবিধার কথা ভুলে যায়, ঠিক তখনই সেই সমাজ বা রাষ্ট্রে দেখা দেয় চরম নৈরাজ্যতা, আর সমাজ থেকে হারাতে থাকে সহনশীলতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মমত্ববোধ, তাই আসুন আমরা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেকে বিলিয়ে দেই অন্যের তরে, অন্যের অধিকারের প্রতি হই শ্রদ্ধাশীল । আর আজ যারা দেশ ও জাতীর অভিভাবক আমি তাদের কে বলতে চাই মৌলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবীর ওসমানী, জিয়াউর রহমান তাদের কে নিয়ে কোন বাজে মন্তব্য না করে, আপনারা দেশ ও জাতীর অভিভাবক তাই দেশ ও জাতীর দিকে  নজরদিন, আমাদের প্রতি সুবিচার করেন আর আমার মতো হাজারো সন্তানের মা কে দেওয়া প্রতিশ্রুতির নিশ্চয়তা দেন !!!

লেখক :  দেওয়ান মশিউর রেজা চৌধুরী রিপন ( সংক্ষেপে : ডিএম রেজা চৌধুরী রিপন) 

    কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক, মঞ্চ অভিনেতা, খেলোয়াড়, সংগঠক  

          ও শিক্ষা অনুরাগী ।

 
 এই লেখাটি ২৪ মে, ২০১৮ইং তারিখ অনলাইন নিউজ পোর্টাল somoynews24.com এ প্রকাশিত হয় এখানে প্রকাশিত লেখার হুবহু দেয়া হল)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *