অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা কী? ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার বিস্ময়কর উপকারিতা জানুন

অ্যালোভেরা কী?: অ্যালোভেরা কী? ও অ্যালোভেরা জেল এর গুনাগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে আজ আমরা জানব। বৈজ্ঞানিক নাম Aloe vera, ইংরেজি নাম  Medicinal aloe, Burn plant. একটি রসালো উদ্ভিদ প্রজাতি।  ঘৃতকুমারী গাছটা দেখতে অনেকটাই কাঁটাওয়ালা ফণীমনসা বা ক্যাকটাসের মতো। অ্যালোভেরা ক্যাক্টাসের মত দেখতে হলেও, ক্যাক্টাস নয়। লিলি প্রজাতির উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চল ও মাদাগাস্কার। অ্যালোভেরা আজ থেকে ৬০০ বছর আগে মিশরে উৎপত্তি লাভ করে। ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার পাওয়া যায় সেই খৃীষ্টপূর্ব যুগ থেকেই। 

অ্যালোভেরার বিস্ময়কর উপকারিতা ও অ্যালোভেরা কী কী কাজ করে? 

ওজন কমাতে অ্যালোভেরা

ওজন কমাতে অ্যালভেরা জুস বেশ কার্যকরী। ক্রনিক প্রদাহের কারণে শরীরে মেদ জমে। অ্যালোভেরা জুসের অ্যাণ্টি ইনফ্লামেনটরী উপাদান এই প্রদাহ রোধ করে ওজন হ্রাস করে থাকে। পুষ্টিবিদগণ এসব কারণে ডায়েট লিস্টে অ্যালোভেরা জুস রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে অ্যালোভেরা

হজমশক্তি বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা জুসের জুড়ি নেই। এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে, যা হজমশক্তি বাড়িয়ে থাকে। অ্যালোভেরা ডায়রিয়ার বিরুদ্ধেও অনেক ভাল কাজ করে।অ্যালোভেরার জুস কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখে। এটি দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করতে সাহায্য করে। এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অ্যালোভেরা

যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত অ্যালোভেরা রস খেলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে আনতে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা

ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। অ্যালোভেরার অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরী উপাদান ত্বকের ইনফেকশন দূর করে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।উজ্জ্বল ত্বক পেতে, বয়সের ছাপ থেকে মুক্তি পেতে গেলে নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল লাগান।

হার্ট ও দাঁতের যত্নে অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরার জুস কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখে। এটি দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে দেয় এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও অ্যালোভেরা জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথা ও ইনফেকশন নিবারণে সহায়তা করে।

মাংসপেশী ও জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধ করে অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। এমনকি ব্যথার স্থানে অ্যালোভেরা জেলের ক্রিম লাগালে ব্যথা কমে যায়।

রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে করে অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা হল অ্যান্টি ম্যাইকোবিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদানসমৃদ্ধ একটি গাছ। অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত পান করলে রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহের টক্সিন উপাদান দূর করে দেহ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

মুখের দূর্গন্ধ দূর করে অ্যালোভেরা

এতে আছে ভিটামিন-সি, যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি ফোলা, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরার জেল মাউথ ওয়াশের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

চুলের খুশকি দূর করে অ্যালোভেরা

খুশকি দূর করতে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী। ঝলমল চুলের জন্যেও অ্যালোভেরা অনেক উপকারী।

মুখের ঘা সারায় অ্যালোভেরা

অনেকের মুখে ঘা হয়, আর এই মুখের ঘা দূর করতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকারী। ঘায়ের জায়গায় অ্যালোভেরার জেল লাগিয়ে দিলে মুখের ঘা ভাল হয়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে অ্যালোভেরা

গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যালো ইমোডিন, যা স্তন ক্যান্সার রোধ করে। এছাড়াও অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরা অনেক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।

ক্লান্তি দূর করে অ্যালোভেরা

দেহের দুর্বলতা দ্রুত দূর করে অ্যালোভেরার জুস। আপনি যদি অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত পান করেন তাহলে দেহের ক্লান্তিও তো থাকবেই না বরং দেহকে সতেজ ও সুন্দর রাখবে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরার মধ্যে যে জেল থাকে তার অনেক গুণ। এই জেল নিয়মিত পানে পেটের সমস্যা দূর হবে। আর যদি সুষম খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়া সম্ভাব। এছাড়া অ্যালোভেরা জেলে প্রায় ২০ রকম অ্যামিনো অ্যাসিড আছে যা ইনফ্লামেশন এবং ব্যাকটেরিয়া রোধ করে হজম, বুক জ্বালাপোড়া রোধ করে থাকে।

অ্যালোভেরার অনেক সুবিধা রয়েছে। তবে এই সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। আসুন জেনে নিই অ্যালোভেরার অসুবিধাগুলো 

যদি কোনও ব্যক্তি অ্যালোভেরার রস পান করতে চান তবে প্রথমে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন কারণ এর রসগুলিও ক্ষতিকারক হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের অ্যালোভেরার রস ব্যবহার এড়ানো উচিত। কারণ এটি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। অ্যালোভেরা বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়, এটি রক্তের বৃদ্ধি করে । তবে পাশাপাশি এটি কিডনির ক্ষতি করে। অ্যালোভেরার রস বেশি পরিমাণে খাবেন না, কেবলমাত্র এটি ডোজ হিসাবে গ্রহণ করুন, অন্যথায় ডায়রিয়া হতে পারে। অ্যালোভেরা ব্যবহারের কারণে যদি কোনও স্বাস্থ্য অনিয়ম হয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ করুন এবং আপনার নিকটস্থ সাথে যোগাযোগ করুন। ত্বক ভালো রাখতে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী । এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো যে নানা ধরনের ত্বকের জন্য নানাভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে একে! অ্যালোভেরার উপকারিতা শেষ করার মতো নয় । এতে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে বিউটি প্রোডাক্ট হিসেবে অ্যালোভেরার জনপ্রিয়তা অনেক।

অ্যালোভেরা কী? ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা

ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যাবহার জেনে নিন: 

অ্যালোভেরা শুধু ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে না, সেই সঙ্গে নানা ধরনের স্কিন প্রবলেমকেও দূরে রাখে।  আপনার ত্বকের জন্য জেনে নিন অ্যালোভেরার ফেইস মাস্ক ও তাদের কার্যকারিতা নিয়ে।

শসা ও অ্যালোভেরা

যাদের ত্বক খুব স্পর্শকাতর, তারা এই ফেইস মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি বানাতে একটা অ্যালোভেরা পাতা থেকে সংগ্রহীত জেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা শসার রস মেশাতে হবে। যখন দেখবেন দুটি উপাদান ভালো মতন মিশে গেছে, তখন সেটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। প্রসঙ্গত, তৈলাক্ত ত্বক, ময়লা এবং ত্বকে জমতে থাকা নানা ক্ষতিকর উপাদানকে পরিষ্কার করে ফেলতে এই ফেইস মাস্কটি দারুণ কাজে দেয়।

 অ্যালোভেরা ও নিমপাতা

প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি স্কিনের শুষ্কতা দূর করতে এবং ত্বককে প্রাণোচ্ছল বানাতে অ্যালোভেরার উপকারিতা অসীম। অ্যালোভেরা ও নিম পাতা– এই ২টি উপাদান মিলিয়ে বানিয়ে ফেলুন একটি পেস্ট। তরপর সেটি মুখে লাগিয়ে নিন।

অ্যালোভেরা ও হলুদ

হলুদ ব্রণের প্রকোপ কমায় এবং অ্যালোভেরা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। কাঁচা দুধ ত্বকের পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে। ফলে ত্বক নরম হয়।দুধ, হলুদ এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে বানানো এই ফেইস মাস্কটি উজ্জ্বল এবং নরম ত্বক পেতে আপনাকে সাহায্য করবে।

 লেবু ও অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, যা ব্রণ এবং চুলকানি কমায়।  এই প্রাকৃতিক উপাদানটি লাগালে স্কিন আর্দ্র হয়। ফলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়। কিভাবে বানাতে হবে এই ফেইস মাস্কটি? এটি বানানো খুব সহজ! পরিমাণমতো অ্যালোভেরা জেল নিয়ে তাতে এক ড্রপ লেবুর রস দিয়ে ভালো করে দুটি উপাদান মেশান। তারপর তা মুখে লাগিয়ে কম করে হলেও ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলুন।

অ্যালোভেরা কী? ও অ্যালোভেরা জেল এর গুনাগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে আজ আমরা জেনেছি। অ্যালোভেরা জেল গুনাগুন ও উপকারিতা অনেক ।অ্যালোভেরা গাছ বাড়িতে বসানো খুবই ভালো। এই গাছের জেল ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বাড়িতে সহজেই বসানো যায় অ্যালোভেরা গাছ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *