অতিরিক্ত ওজন বাড়ার কারন ও কমানোর উপায়

অতিরিক্ত ওজন বাড়ার কারন ও কমানোর উপায়

লাইফস্টাইল: সময় কাটাতে বা আড্ডায় ভাজাপোড়া বা কড়া স্বাদের খাবার সবাই বেশ পন্দ করেন। তবে এসব খাবার নীরবে দেহের ওজন বাড়ায় ও কোমড়ের মাপ বড় করতে থাকে। পেটের মেদ ও শরীরের অন্য অংশের মেদ কে এক ভাবলে ভুল হবে। পেটের মেদ যেহেতু লিভার,কিডনি এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গের সাথে লেগে থাকে তাই এতি শরীরের জন্য অনেক বড় বিপদ। এমনকি মৃত্যুর কারণ ও পর্যন্ত হতে পারে। তাই অতি দ্রুত এটি অপসারণ করা প্রয়োজন।

অতিরিক্ত ওজন বাড়ার কারন ও কমানোর উপায়
ওজন বাড়ার কারন

ওজন বাড়ার মুল কারণ

ওজন বাড়ার পর অনেকেই প্রথমে এটা খুঁজে যে ওজন কিভাবে কমানো যায়। কিন্তু খুব কম মানুষ ই আছে যারা দেখে বাড়ার কারণ কি? তাই আগে দেখে নেয়া যাক কোন কারণ গুলো ওজন বাড়ার জন্য দায়ী।

১. অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহন

আমরা রোজ যে সমস্ত খাবার খাই তা থেকে আমাদের শরীরে ক্যালরি সঞ্চয় হয়। আমরা রোজ যে সমস্ত কাজ করি যেমন- হাটাচলা, নিশ্বাস নেয়া, বসে থাকা ইত্যাদি এইসব কিছু হয় ওই সঞ্চিত ক্যালরি খরচ করে। অর্থাৎ গাড়ির যেমন পেট্রল আমাদের তেমন ক্যালরি। এবার আমরা যদি আমাদের যতটা প্রয়োজন তার থেকে বেশি খাবার গ্রহন করি তাহলে অতিরিক্ত ক্যালরি গুলো আমাদের শরীরে ফ্যট বা চর্বি হিসেবে জমা থাকে আর এর ফলশরুপ আমাদের শরীরের ওজন দিন দিন বাড়তে থাকে। একি ভাবে যদি আমরা কম ক্যালরি নিতে থাকি তাহলে আমাদের ওজন কমতে থাকবে।

২. কম পানি পান করা

পানি কম পান করার ফলে ওজন বাড়তে পারে। দৈনিক ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করুন।কারণ পানি দেহের বিপাক্রিয়ার গতিই শুধু বৃদ্ধি করে না সেই সাথে এতা পাকস্থলিতে খাবার ধারনের জায়গা কমিয়ে দেয়। যার ফলে খাবার খাওয়া কম হয় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৩. প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খওয়া

বর্তমানে আমাদের কর্ম ব্যস্ত জীবনকে সহজ করতে প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি আগ্রহ অনেক বেরে গেছে। এসব খাবার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ এর জন্য অনেক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় এবং এতে থাকে প্রচুর পরিমানে অসাস্থকর ফ্যাট ও শর্করা। তাই খাবারগুলো দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করে।

৪. মিষ্টি বা চিনি যুক্ত খাবারের আসক্তি ওজন বাড়ায়

চিনি জাতীয় খাবার শরীরে ইনসুলিনের পরিমান বৃদ্ধি করে। আর ইনসুলিন শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা মেদ বারাতে যথেষ্ট ভুমিকা রাখে। এছাড়াও মিষ্টি জাতীয় খাবারে ক্যালোরি এর পরিমান বেশি থাকে।

৫. পরিশ্রমহীন জীবনযাপন

প্রতিদিন আমরা যে খাবার গুলো খাই তা থেকে শরীর ক্যালরি গ্রহন করে তাই যদি ক্যালরি খরচ করা না হয় পরবর্তীতে তা মেদ হিসেবে জমা হয়। তাই বিভিন্ন শারীরিক ব্যায়াম এর মাধ্যমে এই ক্যালরি খরচ করতে হবে। অনিয়মিত জীবনযাপনই ওজন বাড়ার জন্য দায়ী তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

যে খাবারগুলো খেলে ওজন কমবে

আপনার শরীর স্লিম করতে খাবারও বিশেষ ভুমিকা পালন করে থাকে। শরীর স্লিম করতে নিচের খাবারগুল খাওয়ার চেষ্টা করুনঃ

১. ডার্ক চকোলেট

সব ধরনের চকোলেট নয়। যেসব চকোলেট এ ৭০% এর উপর কোকোয়া থাকে অর্থাৎ ডার্ক চকোলেট তা ওজন কমাতে কার্যকারী।

২. ডিম

ডিমে থাকা কলিন ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। তাই বলে বেশি না খেয়ে পরিমানমতো খাওয়া প্রয়োজন।

৩. ওজন কমাতে শসা

এতে ক্যালরির পরিমাণ নেই বললেই চলে। শসা ক্ষুধার পরিমান কমায় যা ওজন কমাতে সহায়ক। প্রতিদিন সালাদ এ শসা খেলে মিলবে উপকার।

৪. টক দই

এটি ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং দ্রুত মেদ ঝরায়। দিনে অন্তত ১ বার  এক কাপ টক দই খেতে হবে , এটি পেটের কোলেস্টেরল কমিয়ে পেট ক স্লিম করে।

৫. লেবু

প্রতিদিনের তিন বেলা খাবারে লেবু রাখা জরুরী। এছাড়াও সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস লেবু মধুর পানি খেলে দ্রুত পেটের মেদ ঝরে।

৬. ওজন কমাতে রঙিন শাকসবজি

ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন খাবার রাখতে হবে বিভিন্ন রকমের শাকসবজি। শুধু সবুজ নয়,লাল, হলুদ, বেগুনী ইত্যাদি রঙের শাকসবজি খেতে হবে।

৭. গ্রিন টি

গ্রিন টি ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি মেটাবলিজম বাড়ায়। এছাড়াও এটি স্কিন এর জন্য বেশ উপকারী। কিন্তু ওজন কমানোর লক্ষ্যে অতিরিক্ত গ্রিন টি খেলে সমস্যা হতে পারে। তাই দিনে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ বার এর বেশি খাওয়া যাবে না।

এছাড়া আপনি চিয়া সিড বা বীজও খেতে পারেন। চিয়া সিড সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন এখানে।

৮. ওটমিল

ওটস এ থাকে ফাইবার যা চর্বি কমায়। রিসার্চ বলে যারা দিনে ২ থেকে ৩ বাড়ের বেশি ওটস খায় তাদের চর্বি ২০% কম হয় সাধারনের থেকে।

ওজন কমাতে বাদ দিতে হবে যেসব খাবার

বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয় খাওয়া বাদ দিতে হবে। খাবারে অতিরিক্ত শর্করা না খেয়ে খাদ্য পিরামিড অনুশরন করে খাবার খেতে হবে। আবার প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ ইত্যাদি অতিরিক্ত না খেয়ে ২০% প্রোটিন খেতে হবে। ফাস্ট ফুড খাওয়া একেবারেই বন্ধ করা জরুরি এবং চর্বি জাতীয় খাবারের পরিমান কমিয়ে আনতে হবে।

ওজন কমাতে ব্যায়ামের ভূমিকা

ওজন কমানে ব্যায়ামের ভূমিকা অপরিসীম। সুস্থ জীবনযাপন এর পাশাপাশি শারীরিক ব্যায়াম ওজন কমাতে সাহায্য করে। ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময় হল সকাল। মেদ ঝরাতে চাইলে সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করতে হবে। যেমন- হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, যোগাসন ইত্যাদি। কিন্তু রোজার সময় যারা ওজন কমাতে চায় তাদের সকালে না করে বিকালে করার পরামরশ দেওয়া হয়। কারণ সকালে ভারি ব্যায়াম করলে ক্ষুধা বা পিপাসা লাগতে পারে তাই বিকেলে করাই উত্তম। এছাড়াও যারা বডি বিল্ডিং[muscle gain] করতে চান তারা সপ্তাহে প্রতিদিন না করে ১ দিন পর পর বা ৫ দিন করতে পারেন। কারণ muscle build হওয়ার জন্য সময় প্রয়োজন। ব্যায়াম করার ফলে শরীর থেকে কিছু হরমোন নিঃসরিত হয়। যা পেটের মেদ ঝরান সহ মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং শরীর কে সুস্থ রাখে। কিন্তু যাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা রয়েছে যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস তাদের চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম এবং ডায়েট চার্ট অনুসরণ করতে হবে। প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করলে শরীরকে যথেষ্ট পরিমান বিশ্রাম নিতে হবে। তাই পরিমিত বিশ্রাম ও ঘুম  অত্যন্ত প্রয়জনিয়।

অটোফেজি ও ফাস্টিং এর উপকারিতা

মেদ ঝরাতে অটোফেজি ও ফাস্টিং দেবে বাড়তি সুবিধা। অটোফেজি হল না খেয়ে থাকা বা ওয়াটার ফাস্টিং করা। অর্থাৎ না খেয়ে থেকে শরীরকে ওজন কমানর সুযোগ করে দেওয়া। কিন্তু এতে  আমাদের শরীরের ক্ষতি হয় না বরং উপকার হয়। এর ফলে শরীর জমে থাকা চর্বি গলিয়ে শক্তি উৎপাদন করে। এছাড়া অটোফেজি এর কারনে শরীরে উৎপন্ন হওয়া ক্যাস্নার কোষ ধংস হয়ে যায়।

ওজন কমাতে জনপ্রিয় কিটো ডায়েট

কিটো এর মধ্যে দুই ধরনের কিটো রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর কিটো এবং স্বাস্থ্যকর কিটো। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খেয়ে বা অস্বাস্থ্যকর চর্বি খেয়ে যে কিটো পালন করা হয় তা হল অস্বাস্থ্যকর কিটো। তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন না করাই ভালো। আবার ভালো ফ্যাট বা চর্বি খেয়ে জ কিটো পালন করা হয় তা হল স্বাস্থ্যকর কিটো। এই পদ্ধতি অবলম্বন করা ভালো। এই ডায়েটে অঙ্ক দ্রুত ওজন কয়ান যায় যেমন এক মাসে প্রায় ১৫/২০ কেজি। এই পদ্ধতিতে শুধু ফ্যাট খেয়ে ফ্যাট ঝরান হয়। কিন্তু এতে অনেকের সমস্যা হতে পারে কারণ ২০% এর বেশি চর্বি খেলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই ডায়েটিসিয়ান এর পরামর্শ নেয়া জরুরি।

দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা

যে বিষয়টিতে খেয়াল রাখতে হবে তা হল চিন্তা মুক্ত থাকা। বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত মেদ কমা এবং বাড়ার অন্যতম কারণ স্ট্রেচ বা দুশ্চিন্তা। এর কারনে আমাদের শরীরে বিভিন্ন হরমোন নিঃসরিত হয় যা ওজন বাড়া থেকে অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে এ বিষয়ে। পরিশেষে, ওজন কমাতে হলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনসহ খাওয়াদাওয়ায় এনং কাজকর্মে খেয়াল রাখতে হবে। নিজে সচেতন  হওয়ার পাশাপাশি অপরকেও সচেতন রাখতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *